কলকাতা, ২০২৫:
পালাবদলের গল্প নয়—এইবার আইন ও নৈতিকতার জটিল সম্পর্ক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিল, একটি প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও নাবালিকা কখনও যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৈধ সম্মতি দিতেপারে না। নাবালিকা যদি সম্মতিও হয়ে থাকে, আইন সেই সম্মতিকে অগ্রাহ্য করবে। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, নাবালিকার ‘সম্মতি’ আইনি দৃষ্টিতে শূন্য।
এই মন্তব্য উঠে আসে একটি ভয়াবহ POCSO মামলার রায়ে, যেখানে নিম্ন আদালত অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। হাই কোর্টও সেই সাজা বহাল রাখে এবং অত্যন্ত কঠোর ভাষায় জানায়—নাবালিকাকে কেন্দ্র করে যে কোনও যৌন সম্পর্ক আইনসঙ্গত নয়, সম্পর্কের প্রকৃতি যাই হোক না কেন।
⸻
মামলার পটভূমি
ঘটনাটি ১৪ বছর বয়সী এক নাবালিকাকে নিয়ে। অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক যুবকটি দীর্ঘ সময় ধরে তার সঙ্গে জড়িত ছিল এবং একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। নিম্ন আদালতে প্রমাণিত হয় যে ঘটনাগুলো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আড়ালে ঘটলেও তা ছিল স্পষ্টতই অপরাধ।
শুনানির সময় অভিযুক্ত পক্ষ দাবি করে, সম্পর্কটি পারস্পরিক সম্মতিতে হয়েছিল এবং নাবালিকার ইচ্ছেই ছিল মূল। কিন্তু আদালত সেই যুক্তিকে সম্পূর্ণ বাতিল করে। POCSO আইনে নাবালিকার ক্ষেত্রে সম্মতি—যতই থাকুক—আইন কখনই তা বিবেচনা করে না।
⸻
হাই কোর্টের স্পষ্ট অবস্থান
হাই কোর্ট তার রায়ে যে তিনটি বিষয় অত্যন্ত জোর দিয়ে ব্যাখ্যা করেছে—
১. নাবালিকার সম্মতি = আইনত শূন্য
কোর্ট বলেছে,
“একটি প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও নাবালিকা কখনোই যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৈধ সম্মতি দিতে পারে না।”
অর্থাৎ, কোনও অজুহাতেই আইন ভাঙার সুযোগ নেই।
২. প্রেমের সম্পর্ক অপরাধকে হালকা করে না
যে যুক্তি সাধারণত অপরাধী পক্ষ তুলে ধরে—সম্পর্ক ছিল, দুজনেই চেয়েছিল—হাই কোর্ট বলেছে, এই বক্তব্য POCSO আইনে কোনো মূল্য বহন করে না।
৩. নাবালিকার উপর প্রভাব, চাপ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা
কোর্ট পর্যবেক্ষণ করে যে কমবয়সী মেয়ে বা ছেলেরা মানসিকভাবে কখনোই যথেষ্ট পরিপক্ক নয় যৌন সম্পর্কের সিদ্ধান্ত নিতে। তাদের সম্মতি সবসময়ই প্রভাবিত, অসম্পূর্ণ বা চাপের কারণে হতে পারে।
⸻
যাবজ্জীবন সাজা বহাল
হাই কোর্ট নিম্ন আদালতের দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখে।
এটি স্পষ্ট বার্তা দেয়—নাবালিকার প্রতি যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে আদালত কোনো নমনীয়তা দেখাবে না।
⸻
ক্ষতিপূরণ ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় কোর্টের নির্দেশ
রায়ে আদালত শুধুমাত্র সাজা বহাল রাখেনি, বরং নাবালিকাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও মানসিক পুনর্বাসনের দিকেও নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
POCSO মামলায় ভিকটিম সাপোর্ট সিস্টেম শক্তিশালী করা এবং রাজ্যকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
⸻
আইনি ও সামাজিক গুরুত্ব
এই রায় শুধু একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়—বর্তমান সমাজে বেড়ে ওঠা ‘প্রেম বনাম শোষণ’ বিতর্কেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। কিশোর-কিশোরীরা সম্পর্ক তৈরি করছে, কিন্তু তারা আইন বোঝে না। আদালতের ভাষ্য পরিষ্কার—কমবয়সী সন্তানের সুরক্ষাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, সম্পর্ক নয়।







